মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে গেল। চোখ তখনও বন্ধ। চোখ বন্ধ থাকা অবস্থায় বুঝতে পারলাম মাথার কাছে কেউ দাড়িয়ে আছে। মাথার কাছে কারও দাড়িয়ে থাকার কথা না। ফ্ল্যাটে আমি একা। আমার স্ত্রী রানী কে গত কাল তার বাবার বাড়ী নীলফামারী রেখে এসেছি। সামনে ঈদের ছুটি, ঈদের আগে ঢাকা থেকে বাড়ী যাওয়া অনেক কষ্টকর হবে বলে আগেভাগে রেখে এসেছি। মাথার কাছে যে দাড়িয়ে আছে সে পাশ দিয়ে হেঁটে পায়ের কাছে এসে দাড়াল। এতটাই পাশদিয়ে হেঁটে গেল, হেটে যাওয়ার সময় বাতাসের বেগ অনুভব করলাম। কিছুক্ষণ দাড়িয়ে ছিল পায়ের কাছে। ঘরের দরজা খোলার শব্দ পেলাম। দরজা দিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেল সম্ভবত। আমি চোখ বন্ধই রাখলাম। চোখ         খুলতে ইচ্ছা করছে না কিংবা চোখ খোলার সাহস পাচ্ছি না। জানি চোখ খুলেল সামনে দেখব কিছু নেই, তারপরও একটা ভয়। 
এমন ঘটনা এর আগেও  ঘটেছে। ছয় মাস আগে, সদ্য বিয়ে করে মেস জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটিয়েছি। ফ্ল্যাট বাসা ভাড়া নিয়েছি। মালামাল তোলা হয়েগেছে বাসায়। সব মালামাল এলোমেলো অবস্থায় ছড়িয়ে আছে। অফিসের ব্যস্ততার কারণে গোছানোর সুযোগ পাইনি। তিন দিন এভাবেই থাকবে। সামনে শুক্রবার ঠাকুরগাঁও গিয়ে রানী কে নিয়ে আসব তখন মালামাল ধীরে সুস্থে গোছানো হবে। অফিস করে বাসায় ফিরতে রাত হয়ে গেল। রাতের খাবার খেয়ে ফ্লোরে কোনরকম বিছানা করে শুয়ে পরলাম। ডান পাশে কাঁত হয়ে শুয়ে ছিলাম। ঘুম প্রায় চলে এসেছিল তখনই দেখালাম সামনে দিয়ে কেউ একজন হেঁটে চলে গেল। হেঁটে গিয়ে ফ্রিজের পাশে মিলিয়ে গেল। আমি দ্রুত উঠে বসলাম। লাইট নিভিয়ে দিয়েছিলাম। ঘর পুরোপুরি অন্ধকার হয়নি। বাহিরে জোসনা। জানালার গ্লাস দিয়ে কিছু জোসনা ঘরে ঢুকছে। ঘরের আসবাবপত্র কোথায় কি আছে বোঝা যায়। আমি উঠে গিয়ে লাইট জালালাম। ফ্রিজের আসেপাশে এবং পেছনে দেখলাম, কেউ নেই। সম্পুর্ণ নিশ্চিত হওয়ার জন্য আলমারী, শো-কেস, ওয়াটড্র এর আসেপাশে দেখলাম এমনকি অন্যান্য রুমে লাইট জালিয়ে দেখলাম। কাউকে খুঁজে পেলাম না। আমি নিশ্চিত, আমার সামনে দিয়ে ছায়ার মত কেউ একজন গিয়েছে। দুরে গিয়ে বাষ্পের মত মিলিয়ে গিয়েছে। সকল রুমের লাইট জালিয়ে রাতটা কোনরকম পার করলাম। পরের দিন একজন কলীগকে সঙ্গে নিয়ে এলাম। 
তবে ঘটনার সূত্রপাত এখান থেকে নয়, ঘটনার সূত্রপাত আরও এক বছর আগে। কোন এক কাজ শেষে গোরস্থানের মাঝপথ দিয়ে মেসে ফিরছিলাম আমরা তিন জন। হঠাৎ করে দুলাল বলল, "আচ্ছা, দিনের বেলা আমরা গোরস্থানের মাঝ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি বলে বিষয়টি খুবই স্বাভাবিক মনে হচ্ছে, গভীর রাতে কি আমরা এভাবে হেঁটে যেতে পারব? তখন কি এতটা স্বাচ্ছন্দ বোধ করব? আমাদের একটুও কি ভয় পাবে না?" সুজন কোনকিছু না ভেবেই বলল, "অবশ্যই পারব, ভয়ের ত কিছু দেখছি না।" আমি এভাবে কখনও ভাবি নাই। রাতে গোরস্থানের মাঝ দিয়ে হেঁটে গেলে সত্যি কি ভয় পাব, বুঝতে পারছি না। এর আগে কখনও রাতে এ পথে আসার প্রয়োজ পরেনি। আমি বললাম, "রাতে কখনও এ পথে আসি নাই, তাই বুঝতে পারছি না। তবে ভয় পাওয়ার মত কিছু দেখছি না।" দুলাল তাৎক্ষণিক বলে উঠল, "ঠিক আছে তাহলে আমাদের সাহসের পরীক্ষা হয় যাক। আমরা কাল রাতে এখানে আসব। তবে তিনজন এক সাথে নয়, একজন একজন করে। দেখি কার সাহস বেশি। আমরা এখন গোরস্থানের কোন এক জায়গায় তিনটা পাথর রেখে দিব। রাতে পর্যায়ক্রমে একজন একজন করে গিয়ে পাথর তিনটি নিয়ে আসব।" বিষয়টি আমারকাছে অনেকটা ছেলেমানুষি মনে হলেও আপত্তি করার সুযোগ নেই। বন্ধুদের সামনে আমি ভীতু প্রমানিত হতে চাই না। 
রাত দু'টা বাজে। প্রথমে আমার যাওয়ার পালা। দুলাল, সুজন দুরে দাড়িয়ে আছে। আমি গোরস্থানে প্রবেশ করলাম। অন্ধকারে কিছু দেখা যাচ্ছে না তাই মোবাইলের টর্চলাই অন করলাম। পাথরগুলো খুজেঁ পেতে খুব একটা সময় লাগেনি। একটি পাথর হাতে তুলতে যাব, সেটা হাত থেকে পরে গেল। আবার তুলতে যাব, আবারও একই ঘটনা ঘটল। পরপর তিনবার পাথরটি হাত থেকে পরে গেল। মনে হল পাথরটি যেন জীবন্ত, সে কিছুতেই আমার হাতে আসতে চাচ্ছে না। এ কথা মনে আসতেই আমার ভয় পেয়ে বসল। কাছাকাছি এসে ভয় পেয়ে পাথর না নিয়ে ফিরে যাওয়া ঠিক হবে না। তাই সে পাথরটি না নিয়ে অন্য পাথর হাতে নিয়ে পকেটে ঢুকালাম। যে গতিতে হেঁটে এসেছিলাম, ফিরার সময় তার দিগুন গতিতে হাটতে লাগলাম। হঠাৎ কোন এক গর্তে পা ঢুকে গেল। এটা নিশ্চিত কবর হবে। উরু পর্যন্ত একটি পা ঢুকে গিয়েছে। অন্য পা বাহিরে আছে। একটি গাছ কোন রকমে ধরে রেখেছি। নিচে অনেক বেশি গর্ত, বলতে গেলে পা শুণ্যের মধ্যেই আছে। অন্য পা এমনভাবে মাটির উপরে আছে তার উপর ভর দিয়ে উঠতে পারছি না। গাছ আঁকরে ধরে গর্তে ঢুকে থাকা পা দিয়ে কিছু একটা খুজছি, যার উপর ভর দিয়ে উপরে উঠব। পায়ের নিচে কিছু ঠেকল। নরম, তুলতুলে কিছু। তার উপরই ভর দিয়ে কিছুটা উপরে উঠে এলাম। তারপর উপরের পায়ে ভর দিয়ে গাছ ধরে বাইরে বেরিয়ে এলাম। গর্তের ভেতরের পা যখন তুলতে যাই তখন মনে হয়েছিল ওই নরম বস্তুটি যেন নরে উঠেছিল। প্রকৃতপক্ষে সেটা কি জানার জন্য কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে মোবাইলের টর্চলাইট দিয়ে গর্তের ভেতর দেখার চেষ্টা করলাম। ভেতরে দেখলাম সাদা কাপড় দিয়ে মোড়ানো লাশ, মুখটি খোলা। চোখদুটো এবং ঠোট পোকা-মাকর খেয়ে ফেলেছে। দৃশ্যটি এতটাই বিভৎস যে আমি একমুহুর্ত অপেক্ষা করতে পারলাম না। রীতিমত দৌড়দিয়ে পালিয়ে এলাম। ঘটনাটি তাদেরকে জানালাম না, আমি ভয় পেয়েছি এই ভেবে তারা হয়ত হাসাহাসি করবে।   
এই ঘটনা ঘটার একমাস পরের ঘটনা। ঈদের ছুটিতে মেসের সবাই চলে গিয়েছে। আমি একা আছি মেসে, কাল ভোরে যাব। রাতে বুয়া রান্না করে ঈদের বোনাস নিয়ে চলে গেল। একটু তন্দ্রায় গিয়েছি, তখন মনে হল বুয়া দরজা খুলে কিচেন রুমে প্রবেশ করল। বুয়ার কাছে চাবি আছে। বাহির থেকে তালা খোলা যায়, তাই বুয়া রান্না করতে আসলে মেসের কারও দরজা খোলার প্রয়োজন হয় না। বুয়া কিছুক্ষণ আগে রান্না করে চলে গিয়েছিল, ঘুমের ঘোরে সেটা আমার মনে নেই। ওই সময় মনে হল বুয়া হয়ত রান্না করতে এসেছে। ঘুমিয়ে পড়েছি তবে কিচেন রুমের ঠুক-ঠাক শব্দ, তেলে পেঁয়াজ ভাজার শব্দ, পানি ঢালার শব্দ ঠিকই কানে ভেসে আসছে। মসলা পুড়ে যাওয়ার ঝাঁঝাল গন্ধ নাকে এসে লাগল। ঘুম ভেঙ্গে গেল। ঘুম ভেঙ্গে প্রথমে দরজার দিকে চোখ গেল। দরজার ছিটকিনি লাগানো। দ্রুত উঠে বসলাম। ছিটকিনি লাগানো থাকলে বুয়া ঘরে প্রবেশ করল কি করে? একটু ভয়ে ভয়ে কিচেন রুমের দিকে এগিয়ে গেলাম। কিচেন রুমের দরজার সামনে এসে দাড়াতেই আমার পাশ দিয়ে কেউ যেন বাহিরে বেরিয়ে গেল। প্রকৃত পক্ষে কাউকেই চোখে দেখলাম না। ছায়ার মত কিছু একটা বাইরে বেরিয়ে গেল। 
এর পর থেকে মেসে একা থাকলে এমন সব অদ্ভুদ ঘটনা ঘটে। মনে হয় কেউ যেন পাশে এসে দাড়িয়েছে কিংবা পাশদিয়ে হেটে গেল। দুরে দাড়িয়ে কেউ দেখছে। ঠিকভাবে তাকিয়ে দেখলে দেখি কেউ নেই। অনেক সময় ছায়ার মত কিছু একটা দেখতে পাই। এগুলো কাউকে বলতে পারি না। এমন কথা শুনলে সবাই হাসাহাসি করবে। পাগল ভাববে হয়ত। 
বিয়ের পর ফ্ল্যাট বাসায় উঠার ছয় মাস পেরিয়ে গেছে। একদিনও একা থাকতে হয়নি, তাই এমন ঘটনা ঘটেনি। আজ আবারও এমন ঘটনার মুখোমুখি হতে হল আমাকে। 
চোখ খুললাম। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখি কেউ নেই। জিরো পাওয়ারের বাল্ব জ্বালানো আছে। রুমের সবকিছু স্পষ্ট বুঝা যায়। ঘরের দরজা খোলা। ঘুমাতে যাওয়ার আগে দরজার ছিটকিনি লাগিয়েছিলাম, স্পষ্ট মনে আছে। তাহলে কি কেউ ঠিকই ঘরে প্রবেশ করেছিল? কিন্তু ছিটকিনি লাগানো অবস্থায় কেউ ঘরে প্রবেশ করবে কিভাবে? কেউ যদি ছিটকিনি লাগানো অবস্থায় ঘরে প্রবেশ করতে পারে তাহলে সে ছিটকিনি লাগানো অবস্থায় বের হতে পারবে। ছিটকিনি খুলে বের হওয়ার প্রয়োজন কি?  
            
                        
            
            
            
                        
            
            
                        
            
         
        
               
   
    
                    
        
        
            
            
                 ২৩ জুলাই  - ২০১৪ 
                                        
                            গল্প/কবিতা:
                            ০ টি
                        
                    
            
            
         
     
    
        
বিজ্ঞপ্তি
        এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
    
    
        প্রতি মাসেই পুরস্কার
        
            বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
        
        
            লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
            
                - 
                    
                    
                        প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
                        প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
                    
                 
                - 
                    
                    
                        দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
                        প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
                    
                 
                - 
                    
                    
                        তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
                    
                 
            
         
     
    
    
        আগামী সংখ্যার বিষয়
        
        
            
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ  ২৫ নভেম্বর,২০২৫